নবীজীর অন্তরে ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ভালবাসা

নবীজীর অন্তরে ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ভালবাসা


 নবীজীর অন্তরে ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ভালবাসা


হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উভয়েই রসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। নবীজী ইরশাদ করেন-

إن الحسن والحسين هما ريحاني من الدنيا

অর্থাৎ নিশ্চয় হাসান ও হুসাইন দুনিয়াতে আমার দু'টি ফুল। [তিরমিযী শরীফ : ২য় খণ্ড : ১৪১ পৃষ্ঠা]

নবীজী আপন সন্তান থেকেও তাঁদেরকে বেশি ভালবাসতেন। 

আল্লামা জামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি বর্ণনা করেন: একদা সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ডানে আর স্বীয় সাহেবজাদা হযরত ইব্রাহীম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বামে বসিয়ে আদর করছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা'আলা এদের দু'জনকে আপনার কাছে থাকতে দিবেন না। তাঁদের একজনকে ফিরিয়ে নেবেন।

অতএব, আপনি এদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পছন্দ করুন। নবীজী বললেন যদি আপন সন্তান ইব্রাহীমকে নিয়ে যায়,তাহলে শুধু আমিই কষ্ট পাব। কিন্তু যদি হুসাইনকে নিয়ে যায় তাহলে বিরহে তাঁর মা ফাতিমা ও বাপ আলী খুবই কষ্ট পাবে, আমার মনটাও ক্ষুন্ন হবে। সুতরাং কষ্ট পেলে কেবল আমিই পাই তবুও আমার আলী ও ফাতিমা যেন কষ্ট না পায়। এ ঘটনার তিনদিন পর হযরত ইব্রাহীম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইন্তিকাল করেন। এরপর থেকে ইমাম হুসাইন যখনই নবীজীর কাছে আসতেন তখনই কোলে তুলে নিতেন,কপালে চুমু খেতেন আর বলতেন “আমি হুসাইনের জন্য আমার সন্তান ইব্রাহীমকে কোরবানী দিয়েছি।” (শাওয়াহিদুন নুবুয়্যত : আবদুর রহমান জামী ৩০৫ পৃষ্ঠা।)


আল্লাহর রসূল আরো ইরশাদ করেন-

حسين مني وانا من حسين

أحب الله من احب حسينا

“হুসাইন আমার আর আমি হুসাইনের;আল্লাহ ভালবাসবেন তাকে, যে হুসাইনকে ভালবাসবে।” (তিরমিযী শরীফ : ২য় খণ্ড: ২৪২ পৃষ্ঠাঃ)

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি নবীজীর খিদমতে হাজির হয়ে দেখলাম, তিনি কম্বল গায়ে দিয়ে বসে আছেন। আমার অনুভব হল, নবীজীর কম্বলের ভিতরে আরো কিছু রয়েছে। আমি আবেদন করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমার মা-বাবা আপনার কদমে উৎসর্গিত হোক, আমি জানতে পারি কম্বলের ভেতরে কি রয়েছে? নবীজী কম্বল উঠিয়ে দিলে দেখলাম, দু'পাশে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বসে আছেন।


অতঃপর নবীজী দু'আ করলেন-

اللهم إني أحبهما فاحتهما واحب من يحبهما

“হে আল্লাহ! আমি এদেরকে উভয়কে ভালবাসি তুমিও এদের উভয়কে ভালবাস আরো ভালবাস যাঁরা এঁদেরকে ভাসবাসে।” [তিরমিযী শরীফের সূত্রে 'মিশকাতুল মাসাবীহ' : ৫৭০ পৃষ্ঠা]


একদা হুযূর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে নামাযের ইমামতি করছিলেন। এমতাবস্থায় নবীজী সাজদায় গেলেন, এদিকে হুজরা হতে বের হয়ে শিশু হুসাইন নবীজীর কাঁধের উপর ওঠে বসে গেলেন। এদিকে নবীজীর কাঁধের উপর হুসাইন আরোহন করেছেন, বুঝতে পেরে সাজদা লম্বা করলেন। পরিশেষে হুসাইন স্বেচ্ছায় নেমে যাওয়ার পর নবীজী সাজদা হতে মাথা মুবারক উত্তোলন করলেন। নামায শেষে উপস্থিত সাহাবা-ই কিরাম জানতে চাইলেন, এয়া রসূলাল্লাহ্। নামাযে সাজদা করার ব্যাপারে কি কোন ওহী নাযিল হয়েছে? নতুবা আজকের সাজদা এত দীর্ঘ করার কারণটা কী দয়া করে আমাদেরকে বলবেন? নবীজী জবাব দিলেন ওসব কিছুনা।

বরং আমরা যখন সাজদায় গিয়েছিলাম তখন হুসাইন এসে আমার কাঁধের উপর বসে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় মাথাওঠালে হুসাইন পড়ে যাবে। তাই, স্বেচ্ছায় নেমে যাওয়া পর্যন্ত সাজদা দীর্ঘ করলাম। (আল মুস্তাদরাক : ১ম খণ্ড : ১৬৬ পৃষ্ঠা)।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন